শিশির ভট্টাচার্য্যের ‘দাগ তামাশা’ রেখা চিত্রের নতুন মাইল ফলক
শিল্পে প্রাণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দর্শকের সাথে সরাসরি বাক বিনিময়ে বসিয়ে দেয়ার একরকম যাদুকরি বিদ্যা আছে বোধ হয় শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যরে। না হয় তার শিল্পকর্মের সামনে এতো বেশি সময় দিতে হয় কেনো? চিত্র ভাষায় যাপিত জীবনের এতো ভঙ্গি-বিষাদ-বিভক্তি-বিভাব-অনুভাবের সমাহার ইতোপূর্বে পৃথিবীর কোনো শিল্পকর্মে কি আমরা দেখেছি? হ্যাঁ বিচ্ছিন্ন অনেক চিত্রকল্প আমাদের পূর্বপরিচিত; তবে সমগ্রতার মানদ-ে শিশিরের শিল্পকর্ম যে ব্যঞ্জনায় ধরা দেয় তা সম্পূর্ণ নতুন।
বাংলাদেশের সমকালীন শিল্পকলার মূল প্রবণতা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় পশ্চিমানুগামী প্রাতিষ্ঠানিক রীতিকে, এর পরেই রয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারসহ শিল্প উপকরণে বৈচিত্র যুক্ত করার বিভিন্ন ধরণের নিরীক্ষাপ্রবণ শিল্প সৃষ্টির প্রচেষ্টা। প্রাতিষ্ঠানিক রীতির অন্যতম সীমাবদ্ধতা হলো এর আবর্তনিক প্রক্রিয়া। ঘুরে ফিরে একই স্থানে থেকে যাওয়ায় এই ধারায় কোন উল্লম্ফন নেই। দর্শক বিমোহিত বিস্ময়ে চিত্রকর্মের সামনে থমকে যাবে এমন সৃষ্টি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা কিংবা এস এম সুলতানের প্রথম বৃক্ষরোপন-এর পর খুব একটা দেখা যায়নি। একেবারে সমসাময়িক শিল্প প্রবণতায় সর্বশেষ উপকরণ যুক্ত হওয়ার পরও অনেকটাই এলোমেলো পশ্চিমা খোলসের অনুকরণ মনে করার সঙ্গত কারণ রয়েছে। শিল্পকর্মে ধারণা ও দক্ষতার যথাযথ সমন্বয় অত্যন্ত দুর্লভ হয়ে গেছে আমাদের চিত্রকলায়। ঠিক এখানেই শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যের কৃতিত্বের জায়গা; তার চিত্রপটে আধুনিকতার বাড়াবাড়ি নেই, নিত্য নতুন উপকরণের চমক নেই, নিরেট সাদা কালো রেখার বিচরণ। কিন্তু শিল্পকর্মে যা থাকতে হয়, যা থাকলে শিল্পকর্মকে বিনা দ্বিধায় রসোত্তীর্ণ শিল্প বলা যায় তার সবটাই পাওয়া যাবে এই আপাত সাদামাটা শিল্পকর্মে।
ঢাকা আর্ট সেন্টারে ১৪ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত হয়ে গেলো শিশির ভট্টাচার্য্যের ‘দাগ তামাশা’ নামধেয় শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেই এখন তামাশা মনে হয় অথবা যেকোন তামাশাই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কাজেই শিশিরের ‘তামাশা’ আদতেই ‘তামাশা’ কিনা তা খতিয়ে দেখবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তার ‘দাগ তামাশা’য় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ‘দাগ’। রেখার পৈতা ছেড়ে ‘দাগ’ হয়ে ওঠার এটা সামাজিক বিকার। রেখার এক রৈখিকতা থেকে মুক্ত হয়ে দাগ হয়ে ওঠে বহুগামী। রেখা যেখানে ক্যানভাস ছেড়ে বেরুতে অনিচ্ছুক দাগ সেখানে ক্যানভাস থেকে বেরোবার পন্থাই প্রথম এজেন্ডায় রাখে। দাগের গমন বহু বিচিত্র জায়গায়। দাগ লাগতে পারে চিত্রপট ছেড়ে জামা-কাপড়ে, আসবাব পত্রে, সমাজে-সময়ে, রাজনীতি-অর্থনীতিতে, চরিত্রে-চেহারায় এমনকি অন্তরে। যদিও অন্তরে লাগলে সেটা দাগ থেকে দাগায় পরিণত হযে নিজের ওজন বাড়িয়ে নেয়। কাজেই শিশিরের এই ‘দাগ তামাশা’র অনুধাবন পদ্ধতি আলাদা হতে বাধ্য। এটা অনেকটাই দর্শকের অন্তরে দাগা দেয়ার মতো তামাশা করে ফেলেছে।
শিশির ভট্টাচার্য্যরে শিল্পকর্ম খুবই স্পষ্ট ভাষায় মানুষের কথা বলে; বলা যায় অনেকটা অজনপ্রিয় ঠোঁটকাটা ভঙ্গিতে। এই ভঙ্গি সমসাময়িক কালে খুব ঝুঁকিপূর্ণ, মানুষের সহনশীলতার মাত্রা ক্রমেই তলানিতে নেমে যাচ্ছে। ব্যক্তি কেন্দ্রিকতার চরম প্রদর্শনী চলছে শিল্পে, সমাজে। অপর নিয়ে কথা হচ্ছে অনেক কিন্তু নিজেকেই জাহির করার তীব্র প্রচেষ্টা দেখা যায় এসব অপর কথনে। অপরকে আপন ভাবার হার্দিক তাত্ত্বিকের দেখা মেলা ভার। কাজেই ‘দাগ তামাশা‘র নামে শিশিরের খোঁচাগুলো হজম করা খুব সহজ নয়। প্রদর্শনীতে ছোট বড় মিলিয়ে কাজের পরিমান চব্বিশটি। ছোট কাজগুলো নানা ঘটনার খ-চিত্র, যদিও খ-চিত্র বলতে আক্ষরিক অর্থে যতটুকু বুঝায় এদের ব্যাপ্তি তার থেকে বহুদূর বিস্তৃত। কিন্তু বৃহৎ আকৃতির শিল্পকর্মগুলো সমুদ্রের মতো দর্শককে ভাসিয়ে নেয়। প্রস্তুতিহীন দর্শক এক্ষেত্রে খেই হারিয়ে ফেলতে পারেন।
আচার্য ভামহ প্রাচীন ভারতে যে ধ্রুপদী ধারণার সূত্রপাত করেছিলেন শিশিরের শিল্পকর্ম তার সমকালীন প্রতিচ্ছবি। স্থানিক বৈশিষ্ট্য আচরণের স্বাভাবিকতাগুলো যদি স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ না করা হয় তাহলে তার ছাপ থাকবেই। ভারতীয় শিল্পের প্রাণ মূলত শক্তিশালী, বৈচিত্রময় ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রেখা যা শিশিরের চিত্রপটে নতুন জীবন লাভ করে মোক্ষ লাভের আনন্দে ছুটে বেড়াচ্ছে। মাটির সূত্রে পাওয়া লোকজ শিল্পের নির্যাস এবং পাশ্চাত্য ঘরানার প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলনে একীভূত দৃশ্যশিল্পের রূপ কেমন হতে পারে শিশির ভট্টাচার্য্যের এই প্রদর্শনী তার একটি উদাহরণ।
শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যের ক্যানভাস দর্শককে স্তব্ধ করে দেয়, সময়কে মুহুর্তেই জমাট করে তোলে, কোন অজানা সেতুবন্ধ রচিত হয়ে শিল্পকর্ম ও দর্শকের দূরত্ব বিলীন হয়ে যায়। তার প্রবল রেখার স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায়, আঁতকে ওঠা, শিউরে ওঠা অথবা ঘৃণায় বিবমিষা তৈরি করে তার জীবিত থিকথিকে চলমান রেখা। অসংখ্য প্রশ্নের জাল বিস্তার করে তার শিল্পকর্ম। এই প্রশ্নগুলো আমাদের পরিচিত, উত্তরগুলো জানা আছে কিন্তু দৈনন্দিন যাপনের চাপে কুঁকড়ে যাওয়া প্রশ্নগুলো শিশিরের ‘দাগ তামাশা’ নতুন করে চাগিয়ে দেয়। দর্শককে প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া এই প্রদর্শনীর স্বার্থকতা।
স্বল্পতম উপাদানের ব্যবহারে পরও শিল্পকে কতটা উচ্চমার্গে স্থাপন করা যায় এর প্রথম উদাহরণ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এবং এর পরেই শিশির ভট্টাচার্য্য। বাংলাদেশের চিত্রকলায় শিশির একটি মাইল ফলক স্থাপন করেছেন, পরবর্তী শিল্পীদের যা মাথায় রাখতে হবে; যদি কেউ এই পথে হাঁটেন অবশ্য এই পথ মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ নয়।
দ্রাবিড় সৈকত
বর্ষবরণে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা
‘শুনহ মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’
বাঙালির কন্ঠে এভাবেই ধ্বনিত হয় তার চেতনা, চরিত্র এবং আকাক্সক্ষার সারৎসার। অগণন ঝড় ঝাপটার পরেও বাঙালির মৌল প্রেরণা থেকে স্থায়ীভাবে বিচ্ছেদ ঘটেনি। বর্ষবরণ বাঙালি সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত এক সার্বজনীন প্রাণের উৎসব। বাংলার কৃষক-বণিক সহ সকল ধরণের পেশা-ধর্ম-বর্ণের মানুষ একাত্ম হওয়ার এই উৎসবে কালে কালে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মাত্রা। বর্ষবরণ উপলক্ষে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ এই নতুন মাত্রার উজ্জ্বল সংযোজন।
বৃহৎ বাংলার ভূমি সন্তানগণই বাঙালি আর সংস্কৃতি মাত্রই চলমান। মানব প্রজাতির অর্জিত ব্যবহার বা অভ্যাস অথবা অনুশীলনজাত উৎকর্ষই হয় সমকালীন সংস্কৃতির রূপ। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় সমকালীনতা এবং চলনশীল বাঙালি সংস্কৃতির রূপটি বেশ সুস্পষ্টভাবে ধরা দেয়। আত্মবিকাশের ধারায় বাঙালির মিলন-বিরোধ ও দ্ব›দ্ব-সংঘাত আছে, বিকার-প্রতিকারের প্রয়াস রয়েছে, উত্থান-পতন, স্বাধীনতা ও পরাধীনতা আছে। উৎসব পার্বন বিনোদনে বাঙালির মনোভূমি কর্ষণ করছে সযতেœ। সে এই মাটিকে ভালবেসেছে, এ জীবনকে সত্য বলে জেনেছে। তাই সে দেহতাত্তি¡ক, তাই সে প্রাণবাদী, তাই সে যোগী ও অমরত্বের পিপাসু। বৌদ্ধ আমলে তার সাধনা ছিল নির্বাণের নয় বাঁচার; কেবল মাটি আঁকড়ে বেঁচে থাকার। মন ভোলানো ভুবনের বনে বনে, ছায়ায় ছায়ায়, জলে-ডাঙ্গায়,প্রশান্ত জীবনকেই প্রাধান্য দিয়েছে বাঙালি। পাল আমলের গীতে মনে হয়, যোগে নয় ভোগেও নয়, মর্ত্যকে ভালবেসে দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যেই যেন সে বাঁচতে চেয়েছে। সেন আমলের ব্রা²ণ্যবাদীতার প্রাবল্যে গীতা-স্মৃতি-উপনিষদের মতো সে মুখে গ্রহণ করলেও মনে মানেনি। কেননা সে ধার করে বটে, কিন্তু জীবনের অনুকূল না হলে তা অনুকরণ বা অনুসরণ করে না। ওহাবি-ফরায়েজি আন্দোলনের পরেও এখানে শরিয়তে ইসলাম তেমন আমল পায়নি। তখন পার্থিব জীবনের স্বস্তি ও জীবিকার নিরাপত্তার জন্য কল্পিত হয়েছিল পাঁচ গাজী ও পাঁচ পীর। নিবেদিত চিত্তের ভক্তি লুটেছে খানকা, অর্ঘ পেয়েছে দরগাহ্ আর শিরনি পেয়েছে সুফিদের লোকায়ত ভাব। বাঙালি এই ঐতিহ্য আজও হারায়নি। বাঙালির শৌর্য-বীর্য হানাহানির জন্য নয়, তার প্রয়াস ও লক্ষ্য নিজের মতো করে স্বচ্ছন্দে বেঁচে থাকার। আনন্দে-আমোদে থাকার প্রবণতা, বাঙালির প্রাণের সাথে মিশে যাওয়া বৈশিষ্ট্য। তাই ধর্মীয় বলয়ের বাইরে যে কোন ঐতিহ্যবাহী পালা পার্বনে তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বর্ষবরণ সম্ভবত সমসাময়িক কালের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এই বর্ষবরণও সবসময় সবকালে একই রূপে আবর্তিত নয়। বরং নতুন সময়ে নতুন চিন্তা ও মননের সুদক্ষ প্রয়োগ দেখা যায়। মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও প্রতিনিয়ত সংযোজন হচ্ছে নতুন চেতনার ভঙ্গিসমূহ।
বাঙালির শিল্পচর্চায় আকাক্সক্ষা আর সীমাবদ্ধতার মনোভূমিতে শিল্পীরা নতুন পথের সন্ধান খুঁজে বেড়ান। সময়ের প্রয়োজনেই শিল্পের সম্ভাবনা বিস্তৃত হয়। বাঙালির স্বকীয় জীবনধারার প্রতিটি ক্ষেত্রে শিল্পমগ্নতা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। প্রাচীনকাল থেকেই উৎসবপ্রবণ জাতি হিসেবে বাঙালি একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে লক্ষ্যণীয় ।
শিল্পচর্চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভূমিকা সময়ের সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নববর্ষ উদযাপন বাঙালির সুপ্ত চাহিদার দীর্ঘ অপেক্ষার প্রতিফলন । চারুকলা থেকেই বাংলা নববর্ষের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ সার্বজনীন হয়ে উঠেছে ; এই শৈল্পিক উৎসব নাগরিক জীবনে প্রাণসঞ্চার করলেও মূলত বাংলার মাটির গন্ধকে লালন করে চলেছে এবং ঐতিহ্যের পাখনায় নতুন নতুন পালক যুক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যশোরে চারুপীঠের উদ্যোগে প্রথম এই শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে; আর ঢাকায় চারুকলা অনুষদের কিছু শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে প্রথম এই আয়োজন হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বার উৎসবের সময় শিল্পী ইমদাদ হোসেন এর নামকরণ করেন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। যেকোন অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করে নতুন একটি বছর শুরুর উদ্দেশ্যেই এই অভিযাত্রা। নব্বইয়ে জাতির সংকট কালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ মানুষের সাথে শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী তাদের প্রতিবাদের ভাষায় সম্পৃক্ত হয়েছিল; আজ এত বছর পরে এসে নতুন প্রজন্ম খুব সহজেই বুঝতে পারছে এর মর্মকথা আর উদ্দেশ্য। সাম্প্রদায়িক ভাবনা থেকে বেরিয়ে যে স্বদেশ গড়ার আকাক্সক্ষা রয়েছে সেখানে বাঙালির সমৃদ্ধ ইতিহাস আর ঐতিহ্যের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অপশক্তির কালো ছায়া আমাদের আঁকড়ে রয়েছে এখনো। মঙ্গলের চেতনাকে জাতি ধারণ করে সাংস্কৃতিক বলয় নির্মাণের স্বপ্ন এঁকে চলেছে।
বাঙালির জন্য এমন এক উৎসব প্রয়োজন যা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের নিজস্ব বলে মনে হবে এবং সমগ্র জাতি একাত্ম হয়ে উদযাপন করবে। আর সেকারণেই বাংলা নববর্ষ নির্ধারণ করা সহজ হয়েছে। এই উৎসবে শ্রেনী-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের উচ্ছ¡সিত অংশগ্রহণ উদ্দীপ্ত করে। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রধান যে মোটিভ ব্যবহৃত হয় তা সম্পূর্ণ ভাবেই এদেশের লোকজ ঐতিহ্য থেকে সংগৃহীত । বাংলার আবহমানকাল থেকে কাঠের-মাটির-শোলার মাধ্যমে তৈরি বাঘ, হাতি, ঘোড়া, পাখি, পেঁচা, কুমির, টেপা পুতুল, গরুর গাড়ি, পালকি, নৌকা, পাখা, ঝালর- এসব মোটিভগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে এই শোভাযাত্রায় মূল প্রতীক হিসেবে বেছে নেয়া হয় প্রতিবছর। বাংলাদেশের এক অঞ্চলের সংস্কৃতির সাথে অন্য অঞ্চলের পরিচয় করিয়ে দেয়ারও একটি উদ্যোগ থাকে এই মোটিভ নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের দেশপ্রেম ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শিল্পী কামরুল হাসানের লোকজ শিল্পের প্রতি মমত্ববোধ তাড়িত করে শিল্পীদের সবসময়। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের (বিসিক) আয়োজনে বৈশাখীমেলা, লোকজ শিল্পের সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বংশ পরম্পরায় বাংলার লোকজ শিল্পীদের কারুকর্ম এবং দেশীয় সংস্কৃতিতে তাদের অবদানকে সম্মান দেখানোর জন্যও এই মোটিভ নির্দিষ্ট করা একটি লক্ষ্য। আবার দেশীয় ঐতিহ্যের সাথে নতুন প্রজন্মের যোগসূত্র তেরি করারও একটি আকাক্সক্ষা থাকে; এই নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতিতে ঢাকা চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আশাবাদী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিল্পশিক্ষার্থীরা এই অনুষদের অগ্রজ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এই বর্ষবরণ আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য এই উৎসব উদ্দীপ্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্ম দেয় যা শিল্পাচার্যের স্বপ্ন এবং চারুকলার প্রধান প্রাণশক্তি। দেশের যেকোনো সংকটে এই নতুন প্রজন্ম আশাজাগানিয়া হয়ে উঠবে। এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রায় সময়ের প্রয়োজনে দেশের রাজনৈতিক-আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে একটি বিষয়ভিত্তিক মোটিভও নির্মিত হয়। যা বক্তব্য সমৃদ্ধ অবস্থান তৈরি করে। এভাবেই শিল্পীদের সচেতন শৈল্পিক অবস্থানের চেষ্টা দেখা যায় এই বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ক্ষেত্রে। ২০০০ সালের পর ক্ষমতাধীন জোট সরকারের আমলে একবার ঢাকা চারুকলা বাণিজ্যিক হয়ে উঠেছিল এই বর্ষবরণ উদযাপনের ক্ষেত্রে। অনুষদের শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে বাইরের লোকজন দিয়ে এই উৎসব করা হয়েছিল। যা সাধারণ মানুষ প্রত্যখ্যান করেছিল সম্পূর্ণভাবে। এই সময়টাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল একটি চেতনা নির্ধারণের ক্ষেত্রে। পরবর্তীতে এই উৎসবের ধরণ একটি দৃঢ় ভিত পেয়েছে; শিল্পীদের সিদ্ধান্ত এই বর্ষবরণ উৎসব বাণিজ্যিকীকরণ না করা; স্বকীয়তা বজায় রেখে দেশব্যাপী বিস্তৃত করা। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ শিল্পশিক্ষার্থীদের উদ্যোগে অর্থ সংগৃহীত হয় বিভিন্ন ধরণের শিল্পকর্ম, মুখোশ, সরাচিত্র আর কারুশিল্পের নানান উপাদান বিক্রয়ের মাধ্যমে। একটি উৎসবকে কেন্দ্র করে শিল্পশিক্ষার্থীদের আয়োজন আর ক্রমান্বয়ে তা জাতীয় উৎসবে পরিণত হওয়া- এই উপলব্ধি একজন শিল্পীর মানস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ।
চিন্তা জগতে বাঙালির বিদ্রোহের ইতিহাস সুপ্রাচীন। বাস্তবে তাকে পরাস্থ করা গিয়েছে। ইতিহাসের অধিকাংশ এলাকা জুড়ে কিন্তু তার মেধা মনন কখনোই আত্মসমর্পন করেনি। নীহাররঞ্জন রায় কথিত বেতস লতার চরিত্রটি এখানে প্রনিধান যোগ্য। ঝড়ের তান্ডবে নুয়ে পড়া বাঙালি পরমুহূর্তে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। চেতনা ও ঐতিহ্যের জায়গায় তার সুস্পষ্ট অবস্থান ইতিহাস থেকে তাকে মুছে দিতে পারেনি। স্বকীয় বোধ-বুদ্ধির প্রয়োগে তত্ত¡-তথ্যকে, প্রতিবেশ ও পরিস্থিতিকে নিজের জীবন ও জীবিকার অনুকূল ও উপযোগী করে তোলার সাধনাতেই বাঙালি নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছে। এজন্যই কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ বাঙালির মানস সন্তান হলেও নেতৃত্বে থাকেনি বাঙালির। রাজনীতির তত্তে¡র দিকটিই আকৃষ্ট করেছে বেশি বাস্তব প্রয়োজনে সে অবহেলা পরায়ণ। কারণ তাতে বাহুবল, ক্রুরতা ও হিং¯্রতা প্রয়োজন। এই শান্তি প্রিয়তা তার জল-ভূগোল-আবহাওয়ার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কৃষির ভিত্তিতে দাঁড়ানো বাঙালির অর্থনীতির বুনিয়াদ। কৃষকের চরিত্রটিও তাই প্রধান দিক। উৎসবে তার যত আগ্রহ, বিলিয়ে দেয়ায় তার যত আনন্দ, আন্তরিক আপ্যায়নে তার যত প্রস্তুতি ততটা আর কোথাও পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ আছে। সারা বাংলায় এই বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে অনেককিছু সামনে চলে আসে। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় যত শিল্পীর যৌথশ্রম (বিনা পারিশ্রমিক) -এই বাঙালি চরিত্রের অংশ। তবে শুধু চেতনাগত দিকেই নয় সময়ের প্রয়োজনে বাঙালি সরাসরি বিদ্রোহী হয়ে ওঠারও রয়েছে সমৃদ্ধ অতীত। কৈবর্ত বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, তিতুমীর, ফকির, সন্ন্যাসীদের ফুঁসে ওঠা এবং নিজস্ব ভূখন্ডের জন্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জীবনের নতুন অধ্যায়।
বৈশাখী আয়োজনগুলো বাঙালির সর্বকালীন-সার্বজনীন উৎসব। যখন বাঙালি তার ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে নিয়ে এসেছে; মানুষের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে ধর্ম, তখনই রক্তাক্ত হয়েছে এখানকার মাটি। আর এখন বাঙালি আত্মস্থ হয়েছে। তার আত্ম-জিজ্ঞাসা প্রখর হয়েছে, সংহতি কামনা হয়েছে প্রবল। ঔপনিবেশিক শিক্ষা তাকে ভুলিয়ে দিতে পারেনি মাটির ঘ্রাণ, এই মাটি থেকেই ফুলের মতো ফুটে ওঠে শিল্পকলা আর কবিতার পংক্তি । চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালি জাতির আকাক্সক্ষা আর স্বপ্নের সীমাকে বিস্তৃত আর দীর্ঘায়িত করে।
সিলভিয়া নাজনীন
Art Adda
Yesterday, we had a wonderful time disscussing ‘Art’ in our Library at Dhaka Art Center. Young Art Enthusiasts were present to disscus, share and learn about art and everything surrounded it.
Art Adda is a platform where anyone can share their opinion on art and the happenings around the world. Here we want everyone to get out of their shell and ask whatever questions or share whatever they think on art. We will announce the date and time of our next Art Adda. So you are welcome to join us, just keep your eyes on our facebook group.
Image
Hidden Canvas: Impression of Urban Life
Solo Photography and Painting Exhibition by Mashiul Chowdhury
Looking at one of the Mashiul Chowdhury’s work, I was almost sure it was a painting. Right then I overheard someone saying, ‘Such a wonderful way of presenting a photo!’ I tried to look back and correct him, ‘This is a painting.’ Before I embarrass myself I realized it was indeed a photograph. A photo of a wall that carries stories of decades, with several layers of worn out paints plastered over it.
Professionally a fulltime doctor, Mashiul Chowdhury resides in Philadelphia for past 23 years. Photography and painting is his passion. It was his first solo exhibition in Bangladesh.
.A complete abstract form of art, yet ‘Hidden Canvas’ tells us stories of the urban society and its imprints left by the citizens. Broken, worn out colors, cracked surface of the walls, pathways are his subject of interest. Sometimes, they carry some letters, signs, numbers, and words. According to Mashiul,they are the imprints left by the urban society. Though he doesn’t have any human figure in the photos or paintings, you can feel their presence. These silent walls bear many stories of this urban society. The shabby wall paints, the almost vanished words might be decades old. The time is passing, so are we, but they are standing frigid, witnessing our life. Mashiul’s keen eyes found the beauty lying within them and captured with his camera. They are actually the canvases where people or nature unconsciously created art.
Texture and color plays dominant role in his works. His other media are oil and charcoal on paper and monoprints, which are also displayed in the exhibition. They also hold the influence of his photography work. The most interesting part is that much of the photographs are printed on the canvas.
The exhibitions started from 1st February 2013 and will continue till 14th February 2013 in Dhaka Art Center. You may not want to miss this exhibition. So, visit us anytime. Our gallery remains open every day from 3 to 8 PM.
written by
Ruxmini Choudhury
Image
An evening with Sofie Lystrøm at Dhaka Art Center
Sofie Lystrøm is a Danish Opera, Classical and Modern singer who enchanted us with her charming voice. She performed along with pianist Nabil Salahuddin in the auditorium of Dhaka Art Center today, 26th January 2013 at 6:30 PM. This was her first time ever to visit outside of Europe and we are very glad to have her with us for the evening.
Kibria Print Fair 2013
Kibria Print Fair 2013 just ended on 7th January 2013 and we have to say it was a successful one. People from various class and profession curiously visited the galleries of DAC. “Are all these for sell?” Once they were assured of the availability of the prints, they threw another set of questions. ‘Is it affordable? Can I buy one?’ And we told them that this is the unique opportunity to buy artworks of famous and practicing artists, as well as students’ in a very reasonable price. Yes, you don’t have to be rich anymore to become art collector or just to decorate your wall with a genuine art print of a famous artist. It started from only 200 BDT!
Several printmaking organizations participated in the fair besides Kibria Printmaking Studio of Dhaka Art Center. The organizations are:
Printmaking Department, Faculty of Fine Arts, University of Dhaka
Printmaking Department, Institute of Fine Arts, University of Chittagong
Printmaking Group, Department of Fine Arts, University of Rajshahi
Printmaking Studio, Faculty of Fine Arts, UODA
Shafiuddin Bengal Printmaking Studio, Dhaka
Cosmos Atelier 71
Bornika Print Studio, Dhaka
Bangladesh Printmakers Association
Professor Koichi Takita, Eminent Ceramic Artist of Japan was present as the chief guest. Professor Syed Barq Alvi, Dean of Faculty of Fine Arts attended as the special guest and Eminent Artist Rafiqun Nabi presicec over the opening ceremony.
Let us share some buyers’ experiences.
A student from University of Dhaka bought a print for his mother saying, ‘My mom loves art. She collects posters and pictures of famous paintings and hangs them on the walls of our house. Unfortunately, we never had a genuine painting or sketch. Even thinking about buying art is luxury to us. So, I am buying it for her birthday present which is in few weeks. I can’t wait to see her smile when she gets it.
Aarpana, an English Teacher of East West University insisted on finding her prints of renowned artists and bought a bunch of them. Not only that, she came back again next day with her students and bought more.
Some people bought art prints saying these were perfect for wedding gift.
We are inspired by the people’s excitement and believe next year more people will pour in and become proud owners of authentic art prints in affordable prince.
Written by
Animated Film Festival
Do not miss your chance to watch some wonderful Animated films from all over the world in Dhaka Art Center’s Auditorium. We are showing two shows everyday from 4th to 11th January 2013. The afternoon show for children starts at 4 pm and the evening show for adult starts at 6 pm. The festival is open for all, so join us in any day or everyday you want.